Principal Says

Md. Abdul Latif (Principal)

ডাঃ জহুরুল কামাল ডিগ্রি কলেজটির প্রয়োজনীয়তা ছিল অনেক আগে থেকেই। কারণ পূর্বে কাশিনাথপুর পশ্চিমে আতাইকুলা দক্ষিণে সাতবাড়িয়া আর সুজানগর ছাড়া কোন কলেজ ছিল না। অথচ এই এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে থেকে পড়ালেখার মত কোন কলেজ ছিল না। যার কারণে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা এস,এস,সি পাশের পর বন্ধ হয়ে যেত। ছেলেরা অল্প সংখ্যক দূরের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়লেও মেয়েদের সে সুযোগ ছিল না বললেই চলে। দুলাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক জনাব গোলাম রসুল বিষয়টা খুবই অনুভব করতেন। তিনি নিজের মনে দুলাইতে একটি কলেজ করার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নে কোন সঙ্গী সাথী পান নাই। হঠাৎ করেই তার আত্মীয়া মহিয়সী নারী জনাবা ডাঃ রওশন আরা কামাল তাঁর স্বামী ডাঃ জহুরুল কামালের স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখার জন্য তাঁর স্বামীর নামে দুলাইতে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান করার প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু জনাব গোলাম রসুল মহোদয়ের মাথায় ছিল কলেজ করার বাসনা। তিনি তাকে বুঝালেন যে গ্রামীন এলাকায় দাতব্য প্রতিষ্ঠান চালানো খুবই কঠিন। বিশেষ করে ডাক্তার থাকতে চান না। দুলাই জনকল্যাণ সংস্থার পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুবাদে তার বিষয়টি জানা ছিল। তিনি তার আত্মীয়া জানাবা ডাঃ রওশন আরা কামালকে বুঝালেন যে, দুলাইতে একটি কলেজ করলে খুবই ভাল চলবে। শুধু প্রতিষ্ঠাকালীন অনুদান দিলেই চলবে। আর কোনদিন কিছু দিতে হবে না। আর দাতব্য প্রতিষ্ঠান করলে প্রতি মাসেই ডাক্তার নার্সদের বেতন সহ ঔষধ কিনতে হবে। যা খুবেই ব্যয় বহুল। তারপরও তা ঠিকমত চলবে না ডাক্তারের অভাবে। তখন ডাক্তার রওশন আরা কামাল বিষয়টি বুঝলেন এবং কলেজ করার জন্য অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু সব টাকা দিতে পারবেন না বলে জানালেন। জনাব গোলাম রসুল মহোদয় বললেন যা পারেন দেন বাকীটা আমি দিব। তারপরও তিনি বললেন যে, আমি একবারে দিতে পারব না। জনাব গোলাম রসুল বললেন যে, ঠিক আছে দুজন মিলেই দিব। জনাব গোলাম রসুল অর্ধেক দিলেন। জনাবা ডাঃ রওশন আরা কামাল প্রস্তাব দিলেন যে, তাহলে ডাঃ জহুরুল কামাল আর তোমার নামে কলেজ কর। তিনি বললেন যে, না আমার নাম দরকার নাই। আপনি যে, কলেজ করায় রাজী হয়েছেন এতেই আমি খুশি। আমি কারো পাচ্ছিলামই না। এভাবে দুজনের টাকায় ১৯৯৪ সালে ডাঃ জহুরুল কামাল কলেজ দুলাইতে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থান নির্বাচনে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কারণ রাস্তার ধারে কোন জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। রাস্তার ধারে যাদের জমি ছিল তারা জমি বিক্রি করতে রাজী না হওয়ায় মহাসড়কের ২০০ গজ দক্ষিণে কলেজ করতে হয়েছে। কলেজের জায়গা সংগ্রহে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন তারা হচ্ছেন জনাব আব্দুল বাছেদ খন্দকার, জনাব হেদায়েত আলী খান, জনাব ইয়াদ আলী মিয়া, জনাব আব্দুল দায়েন খান এবং দুলাই ইউনিয়ন পরিষদের তখনকার চেয়ারম্যান এবং এখনও চেয়ারম্যান আছেন জনাব সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান অগ্রগন্য। তাছাড়া ছাত্র/ছাত্রী দিয়ে সহযোগিতা করেছেন দুলাই ইউনিয়ন সহ সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। এভাবেই কলেজটি গড়ে উঠেছে। কলেজটিতে কোনদিনই ছাত্র/ছাত্রীর সমস্যা হয় নাই। কারণ মহাসড়কের পার্শ্বে অবস্থান হওয়ায় যাতায়াতে সুবিধা হয়েছে। ১৯৯৪ সালে ২০৯ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে ১৯৯৪-১৯৯৫ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কলেজের যাত্রা শুরু হলেও অল্প সময়ে অর্থাৎ ২০০১-২০০২ শিক্ষাবর্ষে ডিগ্রী (পাস) এবং ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে অনার্স কোর্স খোলা হয়েছে। শুধু তাই নহে ১৯৯৭ সালে এইচ,এস,সি পরীক্ষার কেন্দ্র এবং ২০০৮ সালে ডিগ্রী পরীক্ষার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই সাথে ২০১৮ সালে কলেজটি সরকারি হয়েছে। সরকারিকরণে এলাকাবাসী সহ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়েছেন দুলাই ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জনাব সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান সাহেব। তাকে স্যালুট জানাই। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে এ অধমকে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও এলাকাবাসী সব সময়ই সাথে থেকে সহযোগিতা করেছেন। সেই সাথে ছাত্র-ছাত্রী দিয়ে দুলাই ইউনিয়নসহ সুজানগর, সাঁথিয়া, বেড়া উপজেলার অনেক ইউনিয়ন সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। যাত্রাপথে সহযোগিতা করার জন্য আমার সকল সহকর্মী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার আশা ছিল বি,এস,সি কোর্স এবং কমপক্ষে ২টি বিভাগে মাষ্টার্স খোলার। সেই সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একখানা বাস কেনার। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্তি বন্ধ করে দেয়ায় এবং বাস কেনার সামান্য কিছু টাকা কম থাকায় আমার আশা অপূর্ণ আছে এখনও। তবে আশা ছাড়ি নাই। চেষ্টা করে যাচ্ছি। কলেজ সরকারি করণের তালিকায় যাওয়ার পর নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা আসায় আর কোন বিষয়ে অনার্সও খুলতে পারি নাই। আর বছর খানেক পরে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা আসলে বি,এ; বি,এস,এস ও বি,বি,এস কোর্সের প্রায় সব বিষয়েই অনার্স খুলতে পারতাম। বর্তমানে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রি (পাস) ও ০৬টি বিভাগে অনার্স কোর্স চালু আছে। বর্তমানে কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৩৫০০ জন। সবশেষে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা জনাবা ডাঃ রওশন আরা কামাল ও জনাব গোলাম রসুল মহোদয় এবং জমি সংগ্রহে সহায়তাকারীগণ সহ ছাত্র-ছাত্রী দিয়ে সহায়তাকারীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও সশ্রদ্ধ সালাম জানিয়ে শেষ করলাম।